
একসময় মানুষ কেবল তখনই ডাক্তারের কাছে যেত, যখন তারা অসুস্থ হতো বা বড় কোনো সমস্যা হতো। কিন্তু সময় বদলেছে। এখনকার ব্যস্ত জীবনে আমরা সবাই চাই সুস্থ ও ভালো থাকতে। তাই এখন শুধু অসুস্থ হলে নয়, আগে থেকেই শরীরের যত্ন নেওয়া অনেক বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। আমরা যদি আমাদের শরীরের কথা শুনতে শিখি, তাহলে অনেক বড় অসুখের আগে থেকেই সতর্ক হওয়া যায়। কারণ, শরীর আমাদের বিভিন্নভাবে সংকেত দেয়। যেমন, কখনও মাথা ঘোরা, কখনও ঘনঘন ক্লান্ত লাগা, আবার কখনও খাবারে অরুচি বা ঘুম না হওয়া। এই ধরনের উপসর্গগুলো লুকিয়ে থাকা কোনো সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। তাই এসব লক্ষণকে অবহেলা না করে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।
১. চিকিৎসার খরচ কমানো:
অনেকে ভাবে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে অনেক টাকা খরচ হয়। কিন্তু সত্যি হলো, যদি আগেভাগে রোগ ধরা পড়ে, তাহলে পরে বড় চিকিৎসা বা অপারেশনের দরকার পড়ে না। এতে সময়, টাকা ও কষ্ট— তিনটিই বাঁচে।
২. রোগের লক্ষণ আগেই শনাক্ত করা:
অনেক সময় শরীরে রোগ বাসা বাঁধে কিন্তু কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড বা ক্যানসার। নিয়মিত চেক-আপ করলে এই রোগগুলো দ্রুত ধরা পড়ে এবং সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যায়।


৩. সুস্থ থাকার অনুপ্রেরণা:
স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট আমাদের শরীর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। যদি কোনো রিপোর্টে সমস্যা ধরা পড়ে, তাহলে আমরা সচেতন হই এবং খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা, ঘুম, ইত্যাদি সবকিছুর দিকেই গুরুত্ব দেই। এতে আমাদের জীবনযাত্রা আরও স্বাস্থ্যকর হয়।
৪. মানসিক চাপ কমানো:
আজকের দিনে মানসিক চাপ অনেক বড় সমস্যা। এই চাপ অনেক সময় শরীরেও প্রভাব ফেলে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে আমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি যে আমাদের শরীর ভালো আছে। এতে মানসিক চাপ কমে যায়।
৫. রোগ প্রতিরোধে সহায়ক:
নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় কোন কোন ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া দরকার। এতে আমরা রোগ হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারি।
৬. কারা নিয়মিত চেক-আপ করবেন?
সবারই করা উচিত, তবে যাদের বয়স ৩০ এর বেশি, পরিবারে জেনেটিক রোগ যেমন ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ আছে, ধূমপান করেন বা অতিরিক্ত স্ট্রেসে থাকেন— তাদের আরও বেশি প্রয়োজন।
কী কী পরীক্ষা করা দরকার?
১. রক্তচাপ পরিমাপ
২. ডায়াবেটিস পরীক্ষা (রক্তে চিনি)
৩. ওজন ও BMI পরিমাপ
৪. লিভার ও কিডনি ফাংশন টেস্ট
৫. রক্তের কোলেস্টেরল
৬. সাধারণ ব্লাড ও ইউরিন টেস্ট
৭. স্তন ক্যানসার পরীক্ষা (মহিলাদের জন্য)
৮. প্রস্টেট টেস্ট (পুরুষদের জন্য)
৯. চোখ ও দাঁতের পরীক্ষা
প্রয়োজনীয় টিকা নেওয়া: হেপাটাইটিস A ও B
১. ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু)
২. টিটানাস
৩. MMR (হাম, রুবেলা, মাম্পস)
৪. নিউমোনিয়া
উপসংহার:
নিজের শরীরকে গুরুত্ব দিন। শরীর যদি কোনো বার্তা দেয়, সেটিকে গুরুত্ব দিন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেবল রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে না, বরং সুস্থ জীবন নিশ্চিত করে। মনে রাখবেন, প্রতিরোধই সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা।
আপনার পারিবারিক চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে আপনার বয়স ও জীবনধারার সাথে মিলিয়ে উপযুক্ত চেক-আপের সময়সূচি ঠিক করুন।
- Tags:
- Healthcare